অনলাইনে ইনকাম করার উপায়

অনলাইনে ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে সবাই জানতে আগ্রহী, কিন্তু কেনো জানি শেষ পর্যন্ত অনেকেই তা করতে পারেন না।

এর কয়েকটি কারণ আছে। যেমন, এ ধরনের কাজ করার জন্য আপনাকে অনেক ধৈর্য্যশীল হতে হবে, কাজ ভালো করে শিখতে হবে আর সঠিক জায়গায় কাজ করতে হবে, তাহলেই আপনি পারবেন, যা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার আগ্রহ থাকে না। আর তাই অনলাইনে ইনকাম করার আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত অনেকেই তা করতে পারেন না।

অনলাইনে কিভাবে কাজ করা যায়?

অনলাইনে আপনি নানানভাবেই কাজ করতে পারেন, যেমন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারেন। আপনি ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবেন এবং ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কি কি এ নিয়ে আমার লিখাগুলো পড়তে পারেন। আসুন তাহলে এটা নিয়ে কিছু বলি। একজন শিক্ষিত বেকার হিসেবে নিজেকে সবার সামনে না দাড় করিয়ে, চাকুরীর জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে বরং আপনার চেষ্টা করা উচিৎ নিজেই কিছু করার। আপনার অদম্য মেধাশক্তির বলেই আপনি সফল হতে পারেন। এরজন্য চাই আপনার ইচ্ছাশক্তি, যা বর্তমানে অনেকের মাঝে বিদ্যমান থাকার পরেও একটা সময়ে হারিয়ে ফেলে। 

অনলাইনে শুধুমাত্র আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে না অন্যভাবেও কাজ করে আয় করতে পারেন, আর এরজন্য চাই আপনার বিকল্প চিন্তাধারার মানসিকতা। আপনি যদি গতানুগতিক চিন্তা চেতনায় পড়ে থাকেন তাহলেই ঝামেলা, সময়ের সাথে আপনাকেও পরিবর্তন হতে হবে। বর্তমানে কোন ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে তা জেনে নিন, আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করুন, তাহলে আপনিও সফল হতে পারেন। মনে রাখবেন, সার্টিফিকেট এর সাথে আপনার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করুন

বর্তমানে পৃথিবীতে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা ব্যাপক, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে দাড় করাতে পারেন তাহলে আপনি ভালো করতে পারেন। বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখের অধিক ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা Fiverr, Upwork, Freelancer এর মতো জনপ্রিয় সাইটে নিয়মিত কাজ করছেন। এখানে কেউ কাউকে এমনিতেই কাজ দেন না, কাজ পাবেন আপনার দক্ষতার উপর। আপনি চাইলে এখানে যে কোন সাইট এ আপনি আপনার প্রোফাইল খুলে আপনার যাবতীয় তথ্য দিয়ে কাজের জন্য এপ্লাই করতে পারেন। বায়ার আপনার প্রোফাইল ও অভিজ্ঞতা দেখেই কাজ দেবেন, এখানে আপনি ভালো করতে পারলে মাসে ভালো আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশে কয়েক হাজার ডলার ইনকাম করার ফ্রিল্যান্সারও আছেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে শুধু প্রোফাইল ওপেন করলেই হবে না। আপনাকে কাজের জন্য চেষ্টাও করতে হবে। এইসব প্লাটফর্মে সবাই সফল হয় না, তবে যারা ভালো করছেন তারা অনেক ভালো আয় করতে পারছেন। 

ব্লগিং ও কন্টেন্ট রাইট করে আয় করুন

আপনি যদি ক্রিয়েটিভ মাইন্ডের হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ব্লগিং ও কন্টেন্ট রাইটিং করেও আয় করতে পারেন। এর জন্য আপনার লিখার অভ্যাস থাকতে হবে। আপনার লেখনীতে আকর্ষণ থাকতে হবে, যেনো যারা আপনার কন্টেন্ট পড়তে এসেছেন, তাদের ভালো লাগে, আর একবার ভালো লাগলেই তারা আপনার নিয়মিত পাঠক হবেন। কন্টেন্ট ক্রিয়েট করার জন্য আপনি উল্লেখিত প্লাটফর্মে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতে পারেন, এছাড়া আপনি ডোমেইন-হোস্টিং নিয়ে ব্লগ করেও আয় করতে পারেন। আপনার না থাকলে বিভিন্ন সাইট যেমন টাম্বলার এ কাউন্ট করেও ব্লগিং করতে পারেন।

ফেসবুক হতে আয় করুন

বর্তমানে যতোগুলো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম আছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক, আপনি চাইলেও ফেসবুক হতে আয় করতে পারেন। ফেসবুক এর পলিসি মেনে কাজ করলে আপনার ভিডিও কন্টেন্ট দেখিয়েও আপনি আয় করতে পারেন। একটি পেইজ কিংবা আপনার প্রোফাইলের ভিডিও দিয়েও আয় করা সম্ভব। আপনার ভিডিও যতো বেশি সংখ্যক মানুষ দেখবে ততো বেশি আয় করা সম্ভব। এছাড়াও আপনি চাইলে ফেসবুক এ লাইভ প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন গ্রুপ কিংবা পেইজে লাইভ প্রেজেন্টার এর প্রয়োজনীয়তা অনেক, কিন্তু সবাই তা করতে পারেন না, আপনি যদি তা করতে পারেন, তাহলে নিয়মিত লাইভ করেও আপনি আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে অনেক লাইভ প্রেজেন্টার আছেন যারা প্রতিমাসে লক্ষটাকা ইনকাম করছেন ফেসবুক হতে। 

ইউটিউব হতে আয় করুন

আপনার যদি একটা ইউটিউব চ্যানেল থাকে, আপনি এর থেকেও আয় করতে পারেন। ইউটিউব হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম। এখানে আপনি ভিডিও আপলোড করে ইনকাম করতে পারেন। যদি ভালো কন্টেন্ট ডেভেলপ করতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক ভিউয়ার আর সাবসক্রাইবার পেতে পারেন। এরফলে মনেটাইজেশন করার মাধ্যমে আপনি ইউটিউব হতে ইনকাম করতে পারেন। এরজন্য আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও একবছরের মধ্যে ৪০০০ঘন্টা ওয়াচ টাইম লাগবে, এরফলে আপনি মনিটাইজেশন পাবেন, যার ফলে আপনি আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে অনেক ইউটিউবার আছেন যাদের মাসিক ইনকাম কয়েক লাখ টাকা। 

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে আয় করুন

একটি ওয়েবসাইট থাকলে আপনি তার থেকেও আয় করতে পারেন। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট খবুই জরুরী কিন্তু সবাই তা পারেন না। আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইট করে সেখান থেকে আয় করতে পারেন। অথবা আপনার ওয়েব সাইটটিও বিক্রি করে আয় করতে পারেন, যদি আপনার সাইট এ ভালো ট্রাফিক আসে। অনেকেই আছেন, যাদের কাজই হলো ডোমেইন কিনে রাখা আর একটা নির্দিষ্ট সময়ে তা বিক্রি করে দেয়া। তবে এটা সবাই করতে পারে না, কারণ কোন ডোমেইন কখন কাজে লাগবে তা একজন সাধারণ মানুষ বুঝবে না। এরজন্য আপনাকে ভালো করে জেনে নিতে হবে, রিসার্চ করতে হবে। 

যারা এসব কাজ করেন তাদের ডোমেইন ফ্লিপিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে। তাই আপনি একাজ করে ভালো আয় করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে, একটি ডোমেইন কিনে রেখে দিতে হবে, সঠিক সময়ে তা বিক্রি করতে পারেন। না করা পর্যন্ত প্রতি বছর আপনাকে ডোমেইন রিনিউ করতে হবে।

গুগল এড সেন্স-এর মাধ্যমে আয় করুন

গুগল এড সেন্স এর মাধ্যমেও আপনি আয় করতে পারেন, এরজন্য আপনার প্রয়োজন ভালো একটি সাইট যেখানে আপনার কন্টেন্ট আপলোড করবেন। আপনার সাইট এ যদি পর্যাপ্ত পরিমানে ভিজিটর আসে আপনি গুগল এড সেন্স এর মাধ্যমেও আয় করতে পারেন। মনে রাখবেন গুগল এমনিতে আপনাকে টাকা দিবে না। আপনাকে গুগল এডস পলিসি জানতে হবে, পলিসি ভায়োলেট করলেই এড একাউন্ট বাতিল হতে পারে। 

ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবে আয় করুন

যদিও এটি ফ্রিল্যান্সিং এর একটা পার্ট এছাড়াও আপনি নিজেও এটি করতে পারেন। আপনার যদি গলার স্বর ভালো হয়, আপনার যদি উপস্থাপনা ও বাচনভঙ্গি ভালো হয় তাহলে একজন ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবে আপনি কাজ করতে পারেন। এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যেকোন প্রোডাক্ট প্রমোশন, এডভারটাইজমেন্ট, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এ একজন ভয়েস ওভার আর্টিস্ট এর গুরুত্ব অনেক। তাই আপনার যদি এই গুনাগুন থাকে তাহলে আপনিও তা করতে পারেন।

অনলাইনে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিক্রির মাধ্যমে আয় করুন

পৃথিবীতে নানান রকমের কাজের জন্য বিভিন্ন ক্যাটেগরির ছবি ও ভিডিও ফুটেজ এর প্রয়োজন হয়, আর এসবের চাহিদাও ব্যাপক। কিন্তু আপনার কাছে সেটি না থাকলে আপনিও হয়তো তা কিনে নিতে চাইবেন। অনলাইনে বিভিন্ন সাইট আছে যেখানে ফ্রি ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়, তবে আপনার যেটি দরকার তা হয়তো আপনি পাচ্ছেন না, তখন আপনাকে কিনে নিতে হবে। এমন অনেক সাইটে আপনিও একাউন্ট ক্রিয়েট করে আপনার নিজের তোলা ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিক্রি করতে পারেন বা রয়্যালটি পেতে পারেন। এর মাধ্যমেও আপনি অনেক আয় করতে পারেন।

এফ্যিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় করুন

বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম। এর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেও উপকার পায়। আপনি তাদের মাঝে সংযোগ করিয়ে আয় করতে পারেন। অনেক জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটের এফ্যিলিয়েশন করে আপনি আয় করতে পারেন। এরজন্য আপনার নিজের ওয়েবসাইট থাকলে ভালো যদি সেখানে প্রচুর পরিমানে ট্রাফিক আসে, না হলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট বা অন্য মাধ্যমেও আপনি আয় করতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং যদি আপনি শিখতে পারেন আর আপনার কাজ করার সুযোগ থাকে তাহলে আমি আপনাকে অবশ্যই এটি করতে বলবো।

আরও অনেক ভাবেই আপনি অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন, যদিও আজকের টপিক নিয়ে অনেক লিখার সুযোগ আছে, আজকের লেখার পরিমান বেশি হয়ে যাচ্ছে, হয়তো অন্যদিন অন্যান্য পন্থা নিয়ে লিখতে বসবো। আজকের এই লিখা হতে যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে আমার কষ্ট স্বার্থক। আপনার উপরোক্ত বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য থাকলে তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন।

Leave a Comment